Skip to main content

মনে মনে বলতাম ওটাই আমার জায়গা : রণবীর সিং

পর পর দুই বছর সেরা অভিনেতার ফিল্মফেয়ার পুরস্কার পেলেন বলিউড অভিনেতা রণবীর সিং। তিন বছর ধরে তাঁর প্রতিটি ছবি কয়েক শ রুপির ব্যবসা করছে। ব্যবসায়িক দিক থেকে যেমন রণবীরের ছবি এগিয়ে, অভিনয়ের দিক থেকে প্রশংসা পাচ্ছেন সব মহল থেকে। কেমন করে তাঁর স্বপ্ন পূরণ হলো? সেই গল্প শুনুন রণবীরের মুখ থেকে ১৫ বছর বয়সে আমি অভিনেতা হওয়ার স্বপ্ন ছেড়ে দিই। না আমি ছিলাম কোনো তারকার সন্তান, না আমার পরিবারের কেউ কাজ করত হিন্দি সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিতে। এই ইন্ডাস্ট্রিতে কোনো পারিবারিক যোগাযোগ ছাড়া অভিনেতা হওয়ার চিন্তা করাও ছিল প্রায় অসম্ভব। এখানে একজন অভিনেতাকে মাথায় তুলে রাখা হয়, ভালোবেসে তাঁদের ‘হিরো’ বলা হয়। সেই হিরোদের দেখে ভাবতাম, আমি কোনো দিন তাঁদের মতো ভালোবাসার জায়গায় পৌঁছতে পারব না। তাই স্বপ্ন দেখা ছেড়ে দিই কৈশোরেই। আমি কপিরাইটার হওয়ার প্রস্তুতি নিতে শুরু করি।

আমেরিকায় যাই অ্যাডভারটাইজিং নিয়ে পড়াশোনা করতে। দ্বিতীয় বছর পড়াশোনার ফাঁকে শখ করেই অভিনয়ের একটা কোর্স নিই। প্রথম দিনের ক্লাসেই ইনস্ট্রাক্টর আমাকে বলেন, ‘আমি জানতে চাই না তুমি কে, কোত্থেকে এসেছ। আমি শুধু চাই তুমি উঠে এসে পুরো ক্লাসের সামনে তোমার যা ইচ্ছে, তা-ই পারফর্ম করো।’ উঠে গেলাম। হিন্দিতে একটা সংলাপ বলতে শুরু করলাম। পুরো ক্লাসে কেউ আমার ভাষা বুঝতে পারছিল না। কিন্তু আমি এত আবেগ আর রোমাঞ্চ নিয়ে প্রতিটি সংলাপ উচ্চারণ করলাম যে সবাই স্তম্ভিত হয়ে গেল। সিটে ফিরে নিজেকে প্রথমেই যে প্রশ্নটা করি, সেটা ছিল—‘কেন আমি জীবনে এটাই করছি না?’ আমি জীবনে ব্যর্থতা মেনে নিতে পারি। কিন্তু কোনো চেষ্টা না করেই হার মেনে নেওয়া সহ্য করতে পারি না। এর পরপরই বাবাকে ফোন করি। তাঁকে বলি যে আমি কী করতে চাই। তিনি আমাকে একটা শর্ত দেন। শর্তটা হলো, আমাকে পড়াশোনা শেষ করতে হবে। যেন অভিনয়ে ব্যর্থ হলে নিজেকে আবার অন্য ক্ষেত্রে নিয়ে গিয়ে সামলাতে পারি। তা-ই করলাম। পড়া শেষে আমেরিকা থেকে ভারতে ফিরে এলাম।

প্রথমে সিদ্ধান্ত নিই, এমন একটা চাকরি করব, যেটা আমাকে কোনো ফিল্ম সেটের ভেতরে নিয়ে যাবে, ফিল্মি দুনিয়ার মানুষের কাছাকাছি থাকার সুযোগ করে দেবে। হয়তো কোনো ক্যামেরাম্যান, কোনো কুশলী কিংবা সম্পাদকের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পাব। সেটাই আমার সিনেমাজগতে কাজ করার ক্ষুধা মেটাবে। তা-ই করলাম। প্রথম দিন শুটিংয়ে গেলাম। লক্ষ করলাম, এক গাদা লোক দিনের শুরু থেকে সেটের নানা প্রান্তে অক্লান্ত পরিশ্রম করছে। প্রোডাকশন টিম, লাইট, সাউন্ড—সব হচ্ছে একটা কেন্দ্রবিন্দুকে ঘিরে। আর সেই কেন্দ্রটি হলো অভিনেতার জন্য নির্ধারণ করা ‘অ্যাক্টরস মার্ক’। সব যখন ঠিকঠাক হলো, তখন সেই ‘অ্যাক্টরস মার্ক’-এ দাঁড়ানোর জন্য সাজঘর থেকে বেরিয়ে এলেন কাঙ্ক্ষিত এক তারকা। তিনি যখন এলেন, পারফর্ম করলেন, সংলাপ বললেন, আমি দেখলাম সবার পরিশ্রম কয়েক মুহূর্তেই সার্থকতা পেল। সবার চোখে দেখলাম তাঁর জন্য অফুরন্ত মুগ্ধতা। ‘ওটাই আমার জায়গা’—তখনই আমি মনে মনে নিজেকে বললাম।

এরপর আমি চাইছিলাম একটা মঞ্চনাটকের দলে যোগ দিতে। কিন্তু আমাকে কোনো দলই অভিনেতা হিসেবে নিচ্ছিল না। নানাভাবে তাদের দলে নিজের প্রয়োজনীয়তা বোঝাতে চাইছিলাম। দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হওয়ার জন্য আমি বড়দের চেয়ার টেনে দিতাম, শিল্পীদের চা নিয়ে দিতাম, মঞ্চের আলো জ্বেলে দিতাম। প্রোডাকশন দলের সঙ্গে মঞ্চ বানাতাম, মঞ্চ ভাঙতাম, প্রপসের ট্রাংক ঘাড়ে টেনে ট্রাকে তুলতাম, ট্রাক থেকে নামাতাম। মূলত কর্মী হিসেবে কাজ করতাম। সবাই মহড়া করত, আমি বাইরে বসে থাকতাম। একদিন কয়েকজন বলছিল, ‘জানো, পাশের ফ্লোরে ফিল্মের সেট হয়েছে। শুটিং হচ্ছে ওখানে।’ তখন আবার নিজেকে বললাম, ‘এখানে এখনো কী করছি?’
বাবার এক বন্ধুর সাহায্য নিয়ে পোর্টফোলিও বানালাম। পরিচিত মানুষদের ফোন থেকে চলচ্চিত্র নির্মাতাদের নম্বর চুরি করে তাঁদের ফোন করতে শুরু করলাম। কথা বলার পর দিনভর সেই নির্মাতাদের অফিসের বাইরে গিয়ে বসে থাকতাম, তাঁদের পোর্টফোলিও দিতাম, আমার নম্বর দিতাম। আশায় থাকতাম একদিন তাঁরা আমাকে ডাকবেন। কিন্তু অনেক অনেকবার প্রত্যাখ্যাত হলাম, অপমানিত হলাম। আমি আমার জীবনের এত মূল্যবান সময় অভিনেতা হওয়ার চেষ্টায় পার করে দিচ্ছি, কিন্তু দূর–দূরান্তেও সফল হওয়ার সম্ভাবনা দেখছিলাম না। বুঝতে পারছিলাম না, এত কিছু পরও কেমন করে চেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার শক্তি পাচ্ছিলাম!

Comments